ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা"
"ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা"
ড.মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী*
প্রাথমিক কথা : সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। রিসালাত কোনো শিক্ষা, যোগ্যতা বা অর্জনযোগ্য বিষয়ের নাম নয়। দক্ষতা, মেধা বা প্রতিভা দিয়ে এটি লাভ করা যায় না। চর্চা, অধ্যবসায়, অনুশীলন ও সাধনা দ্বারা দুনিয়ার অনেক কিছু অর্জন সম্ভব হলেও নবুওয়াত ও রিসালাত অর্জন সম্ভব নয়। এটি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তা‘আলার মনোনয়ন। মহান আল্লাহর পয়গাম মানব জাতির কাছে বহন করে আনা এবং তা প্রচার করার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ নবী-রাসূল মনোনীত করেন। এ মর্মে কুরআনে এসেছে: ‘‘আল্লাহ ফিরিশতা ও মানবকুল থেকে রাসূল মনোনীত করে থাকেন।’’ [সূরা আল-হাজ: ৭৫] বিশ্ব নবী সা. সরাসরি আল্লাহ তা'আলা নিয়ন্ত্রিত আদর্শ মহাপুরুষ এবং তাঁর জীবন ছিল সকল দিক থেকে ভারসাম্যপূর্ণ এবং সকলের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। মানব সমাজের উন্নতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও চারিত্রিক সবক্ষেত্রে গৌরবময় উত্তরণের পথই হলো- তার অনুসরণীয় আদর্শ। মনে রাখতে হবে, আদর্শহীন কোনো জনগোষ্ঠী পৃথিবীতে সমাদৃত হতে পারেনি আর পারবেও না। তাই আজকের এই অবক্ষয় মুহূর্তেও যদি মুসলিম উম্মাহ ফিরে পেতে চায় তাদের হারানো অতীত, তাহলে তাদের অনুসরণ করতে হবে প্রিয়নবী (সা.)-এর পবিত্র জীবনাদর্শ। সুতরাং সেই আদর্শের পথেই হোক আমাদের নবযাত্রা। আদর্শিক প্রত্যয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠুক আমাদের সমাজ জীবন।
মহান আল্লাহ তা'আলা যথার্থই বলেছেন: "নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম,সুন্দর, স্বচ্ছ অনুকরণীয় জীবনাদর্শ"।
বিশ্ব নবীর সা. ভারসাম্যপূর্ণ জীবন : ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠন করা ইসলামের শিক্ষা। প্রতিটি কাজের হক ঠিকমতো পালন করাই হলো ভারসাম্য। মহান আল্লাহ নম্বর আয়াতে বলেন, এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যমপন্থি মানব দলে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষের ওপর (হেদায়েতের) সাক্ষী হয়ে থাকতে পারো (এবং একইভাবে) রাসুল (সা.) তোমাদের সাক্ষী হয়ে থাকতে পারে। (সুরা বাকারাহ: ১৪৩) ইসলাম কৃপণতাকে সমর্থন করে না আবার অপচয়কেও সমর্থন করে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়। ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত এমন এক জীবন-ব্যবস্থা যা স্বাভাবিক স্বভাবসম্মত ও পরিপূর্ণভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। মানব জীবনের কোনো একটি বিষয় বা দিকের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা এবং স্বাভাবিক ভারসাম্য বিনষ্ট করাকে ইসলাম কোনোক্রমেই সমর্থন করে না। ইসলাম শান্তিপূর্ণ ও নির্ভেজাল জীবন-যাত্রার পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে চায়। এ লক্ষে ফিতনা-ফাসাদ ঝগড়া-বিসংবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত নিষ্কলুষ জীবন গঠনে মহান আল্লাহ তায়ালার খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইবাদত-বন্দেগি, কায়-কারবার, মুয়ামালাত, রিসালাত, আমল ও আখলাকের সকল স্তরে এমন কিছু করা মোটেই ইসলামসম্মত নয়, যা দেহ ও মনের স্বভাবজাত চাহিদার বাস্তবায়নে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। রাসূলুল্লাহ সা. ও আল কুরআনের মাধ্যমে যে দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছেন, তা একান্তই ভারসাম্যপূর্ণ,স্বভাবসম্মত এবং মানবিক সামর্থের অনুকূলে।
- মানবাধিকার ধারণা এবং তার বিকাশ সাধনে ভারসম্য:
- মানুষের বেঁচে থাকার ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভারসম্য:
- পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য তিনিই অনন্য।
- ব্যক্তি জীবনে ভারসম্য: রাসূলুল্লাহ সা.সর্বগুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি সদা প্রফুল্লচিত্ত, কোমল চরিত্রের অধিকারী ও সরল হৃদয়বান ছিলেন। তিনি রূঢ় স্বভাবের ছিলেন না, নির্দয় প্রকৃতিরও ছিলেন না, নির্লজ্জ, গিবতকারী ও বিদ্রুপকারী ছিলেন না। অতিরিক্ত গুণকীর্তনকারী ছিলেন না, মনে চায় না- এমন বস্তু থেকে বিমুখ থাকতেন, কিন্তু কাউকে তা থেকে নিরাশ করতেন না। কেউ ডাকলে সাড়া দিতেন, কেউ উপহার দিলে গ্রহণ করতেন- যদিও তা ছাগলের খুর হত এবং তার উত্তম প্রতিদান দিতেন।তাঁকে কোনো সাহাবি বা পরিবারের সদস্য ডাকলে লাব্বাইক বলে সাড়া দিতেন। তিনি সাহাবাদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। তাদের সন্তানদের সঙ্গে খেলা করতেন এবং নিজের কোলে বসাতেন। মদিনার দূর প্রান্তে বসবাসকারী কেউ অসুস্থ হলে তারও খোঁজ-খবর নিতেন। আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ করতেন।
- বিনয়ী উঁচু মাপের এক চারিত্রিক গুণের অধিকারী: বিনয়ের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোচ্চ উদাহরণ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন। নিজ হাতে ছাগলের দুধ দোহন করতেন। নিজের জুতা নিজে সেলাই করতেন। নিজের সেবা নিজে করতেন, নিজের ঘর নিজে পরিস্কার করতেন। নিজের উট নিজে বাঁধতেন, নিজের উটকে নিজে ঘাস খাওয়াতেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজে বহন করে বাজারে নিতেন।এক কথায়, যত সুন্দর ও কল্যাণময় গুণাবলী রয়েছে, তার নিখুঁত নিখাদ ও পরিপূর্ণ চিত্রায়ন ঘটেছিলো রাসূল (সা.)-এর জীবনাদর্শে।
- বিশ্ব নবীর সা. ভারসাম্যপূর্ণ জীবনে ঘটেছিল মৌলিক মানবীয় গুণাবলীর সমাহার:
- পরিবার গঠনের জীবনে ভারসম্য:
- অধীনস্থদের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ:
- নিপীড়ন-নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক আচরণ থেকে মুক্তির ভারসাম্য নীতি:
- অবাধ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অধীনে ন্যায়বিচার লাভের ভারসাম্য নীতি:
- দয়া, ক্ষমা ও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভারসাম্য নীতি:
- নারী অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভারসাম্য নীতি:
- বৃহত্তর সমাজ-জীবনে শান্তি, সাম্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভারসাম্য নীতি: